Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

স্মৃতিকথা I miss you Can't Forget you

তখন বয়স কত হবে?
হয়তো ১৪-১৫!  এর চেয়ে এক বছরও বেশি নয়।
কোনো একদিন...
রাত তখন ২.২০ বাজে!  আশ্চর্য আমার ঘুম নেই।
কোনো একটা কারণে আমার চোখে ঘুম নেই।
আমি খুব একটা চেষ্টা করলাম না ঘুমাবার।
কারণ ঘুম যখন আসছে না তখন ঘুমানোর কি দরকার।
ইচ্ছে করে যখন ঘুম আসবে তখন ঘুমালেই হয়।
জোর করে তো আর যাই হোক ঘুম হয় না।
মানুষ অন্তত এই একটা জিনিস জোর করে করতে পারে না।
তাই বৃথা চেষ্টা করলাম না।
বরং ভাবতে লাগলাম আগামি কাল কি করব?
তখন এতটাই ছোট ছিলাম।
কি করব তা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।

এক ঘন্টা আগে(রাত ১টা হবে) একটা চিটি লিখেছি।
আমার মোটামুটি ধরনের সব কিছুই মনে থাকে কিন্তু কেন জানি এই চিটির এক অক্ষর ও আমার মনে নেই।
কেন মনে নেই?
আমি তো সব সময় স্মৃতি কে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই।
তখন হয়ত খেয়ালই ছিল না যে,  চিটির একটা কপি রেখে দিলে কেমন হয়।
হয়ত খুব একটা জ্ঞান ছিল না তখন তাই রাখা হয় নি।
আর রাখতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।

ঘুম আসছিল না তার কারণ আবার অন্য টা।
কি লিখেছি তার জন্য না।
কি হবে তার জন্য না।
ঘুম আসছিল না  এর জন্য যে চিটি টা পৌছাব কি করে।
একটা মাত্র মাধ্যম খুজে পেলাম।
আমি ছাড়াও এই চিটিটার কথা
৫ জন মানুষ জানে।
ভুল বললাম আসলে আরেক জন মানুষ যানে সে হল যার কাছে আমি চিটি লিখছি তিনিও যানেন।
তার মানে হল আমি সহ টিটির কথা জানে ৭ জন মানুষ।

রাতে কখন ঘুমিয়ে যাই টের পাই নি।
তখন আমার মোবাইল ছিল।
তবে মোবাইলে বলা টিক সহজ কাজ ছিল না।
তাই চিটিতে বলতে গেলাম।

চিটি টা এক চাচাতো বোনের মাধ্যমে পাঠালাম।
চিঠি পেয়ে মানুষ কত্ত খুশি হয়।
তার ক্ষেত্রে হল বিপরীত।
আমি চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম কপালে খুব খারাপি আছে...
ঠিক ঠিক তাই ঘটল।

আজ একটা কথা ভাবি..
আমার সাথে ঘটনা টা না করলেও তো পারতো...
সে যদি মনে মনে রেখে দিত তবে কি হত..?
তার যদি এমন ভাব হত সে এসব খেয়ালই করেনি।
তার এতে কিছু আসে যায় না।
সে তো এমন ভাব দেখালেই পারতো...!
কিন্তু তা তো সে করে নি।
তার ভিতরের সব রাগ আমার চিটির উপর দিয়েই ঝাড়লো...

আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।
সে তার নিজ হাত দিয়ে চিঠিটা এত কুচিকুচি করে টুকরো টুকরো করেছে আমার দেখেই বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উটলো।
মানুষ কে এভাবে অপমান করতে হয়?
আমি সেই প্রথম শিখি তার কাছ থেকে।

তার এই রাগ দেখানোর কারণও অবশ্য আছে।
আমার কারণে বেচারি স্কুল পযর্ন্ত আসতে পারে না।
আমার মহল্লার এমন কোনো ছেলে নাই যে  জানে না এই কথা।
অবশ্য আমি একটা আদর্শ ছেলে।
যে কাজ টা করেছে সে হল আমার এক ক্লাস মেট।

কুচিকুচি করা চিঠি নিয়ে সে হ্যাডমাস্টারের রুমে উপস্হিত হল।
আমার নাম মাইকে উচ্চারণ হল।
৮ম শ্রেণীর ছাত্র : লুৎফুর রহমান কে অফিসে আসার জন্য বলা হচ্ছে।
আমি ভিতুর ডিম ছিলাম তখন।
সে অনুযায়ী আমি খুব ঘাবড়ে গেছিলাম।
অফিসে গিয়ে দেখি ৪ টা মেয়ে আর হেডমাস্টার।
একটা পর সহকারী হেডমাস্টার আসলেন।
দুটি বেত এক সঙ্গে করে আঘাত করতে লাগলে।
আমি সজোরে কাঁদছি।

ছিঃ কি লজ্জার কথা আমি একটা চিঠি দিয়েছি বলেই এভাবে মার খেতে হচ্ছে।
কই আমি তো তাকে জড়িয়ে ধরি নি।
কিংবা উত্যক্ত করিনি।
আমি তো কোনো দিন তার দিকে তাকাইও নি ভাল করে।
আমি কি খুব মারাত্মক অপরাধ করে ফেলেছি?

আমি সে দিন এই কথা বলার সাহস পাই নি।
আসলে কথা গুলো আমার জানাই ছিল না।
মানুষের ভাল মন্দ বুঝার ক্ষমতা কখন হয় জানি না।
তবে তখন আমার মনে হয়েছিল আমি সঠিক কাজই করেছি।
আমি খুব একটা অন্যায় করিনি।
তখনো আমি জিবনের কাছে একজন ছাত্র মাত্র।
আমার শিখাটা সবে মাত্র শুরু হয়েছে।

ঘটনাটা শুরু হয় যখন আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি।
তখন টিফিন প্রিয়ড চলছিল।
আমি যথারীতি খুব সহজ সরল ছিলাম।
তবে আমার পাশের মানুষ গুলো ছিল মনোবিজ্ঞানী টাইপের।
তারা টিকই আমার বিপরীত একটা মানুষের নামের সাথে আমার নামটা জুড়ে দিয়েছিল।
নাম টা শুধু মাত্র খেলার ছলে লিখা হয়েছিল।
ছেলে দুটি তাদের নামের পাশে মেয়ে দুটির নাম লিখার জন্যই লিখেছিল।
আমিও কেন যেন মেনে নিয়েছিলাম।
কেন যেন ওকে ভাল লাগতো।
খুব একটা সুন্দর না সে।
তবে অসাধারন।
ভয়ঙ্কর ধরনের সুন্দর।
সেই সুন্দরের কোনো ব্যাখা হয় না।
সব সময় সব কিছু ব্যাখাও দেওয়া যায় না।
আর চাইলেও আমি পারব না।
কারণ আমি তার চেহারা টা ভুলেই গেছি।
আর মনে হয় আমাকে দেখলে সে ভূত টূত দেখার মত অবস্থা  হবে।
কারণ সেই পঞ্চম শ্রেণীর লুৎফুর।
আর আজ কলেজ-ভার্সিটিতে পড়া লুৎফুর এক না।
আজ চাকুরিজীবি লুৎফুর সেই অষ্টম শ্রেণিতে পড়া লুৎফুর না।
তবে খুব কষ্ট হয় মানুষ টার জন্য...
কারণ??
মানুষ টা তার নিজ হাতে তার ভাগ্য কে হত্যা করেছে।
তার সেই অষ্টম শ্রেণী পযর্ন্ত লেখাপড়া।
শেষ পযর্ন্ত এমনও দেখতাম স্কুলে আসতো টিকই তবে স্কুলের পাশে তার আত্মীয়দের বাড়িতে চলে যেত।
আজ মনে মধ্যে প্রশ্ন জাগে কেন সে এমনটা করতো?
কেন এত ঘৃণা করতো একটা মানুষ কে...
এমন কি সে জেএসসি পরিক্ষা পযর্ন্ত দেয় নি।
মানুষ টা তো লেখাপড়ায় খুব ভাল ছিল।
তবে এমন কেন ঘটল?
হয়ত সে ইচ্ছে করেই লেখাপড়া করতো না।
তার অহংকারের প্রতিক! তার রুপ নিয়ে একটা আয়নার সামনে সারাদিন বসে থাকতো।
আর কিছুই হতো না।
দিন রাত কোন দিকে চলে যেত সে টেরই পেত না।


আজ অনেক দিন বাদে সেই অপ্রিয় মানুষ টার কথা মনে পড়ে হাসছি।
আজ আর কান্না পাচ্ছেনা।
যখন লিখছি আমি "আমি কাঁদিছিলাম"
তখন হো হো করে হেসে দিয়েছি।
ইচ্ছা করে হাসি নি।
আবার জড়তা নিয়ে হাসি নি।
আজকের পেক্ষাপটে হয়ত হাসি টা আসছে।
কিন্তু তখন? 
এখন আর তখন কতটা তফাৎ।
থাকুক না কিছু অযাচিত কথা কিংবা গল্প....
কিছু অসমাপ্ত গল্প গুলি ভালই লাগে.....

Post a Comment

0 Comments